বাংলাদেশ বাণী, কামরুজ্জামান শাহীন, ভোলা জেলা প্রতিনিধি : দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর জমে উঠেছে ভোলায় ইলিশের মোকাম ও মাছ বাজারগুলো। এ বছরও ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম মা ইলিশ রক্ষায় ১ অক্টোবর থেকে টানা ২২ দিন ইলিশ শিকার, আহরণ, মজুত ও বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। ২৩ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে গত ৪ দিনে ফের ব্যস্ত হয়ে উঠেছে জেলে পল্লীগুলো।
জেলার বিভিন্ন মৎস্যঘাট সূত্রে জানা যায়, টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে নেমে ভোলার জেলেরা এখন মহাখুশি। ছোট-বড় মিলিয়ে জেলার ১২৭টি মাছঘাটের আড়তগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতার উপচে পড়া ভিড়। এসব আড়ৎ থেকে ইলিশ মাছ ভোলার বিভিন্ন বাজারের পাশাপাশি বরিশাল, চাঁদপুর, ঢাকা, খুলনা ও যশোরসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে পাঠাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। ফলে উৎসবে মেতেছে জেলে পল্লীগুলো। মাছ ধরে জেলেরা নদীর পাড়ে এসে তরিঘড়ি মাছ বিক্রি করেই আবার ফিরে যাচ্ছেন নদীতে। কে কত বেশি মাছ আহরণ করতে পারে তার যেন প্রতিযোগিতা চলছে।
ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা মাছঘাটের জেলে আরসাদ আলী, জামাল ব্যাপারী ও পরান মাঝি জানান, যে কয়দিন ইলিশের পেটে ডিম রয়েছে সে কয়দিনই নদীতে মাছ পাওয়া যাবে। ডিম ছাড়া শেষ হয়ে গেলে নদীতে কোনো মাছ থাকবে না। তাই তাদের এত ব্যস্ততা। পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ায় জেলে থেকে শুরু করে ক্রেতা-বিক্রেতা আড়তদার সবাই দারুণ খুশি।
তুলাতলি মাছ ঘাটের জেলে শেখ ফরিদ ও আড়ৎদার রিপন হাওলাদার জানান, এভাবে আর এক সপ্তাহ মাছ পাওয়া গেলে লোকসান পুশিয়ে লাভের মুখ দেখবেন তারা।
এদিকে শহরের বিভিন্ন মাছ বাজার সূত্রে জানা যায়, অন্যান্য সময়ের চেয়ে ইলিশের সরবরাহ বেশি। ক্রেতাদের আনাগোনাও প্রচুর। আর দামও আগের তুলনায় কম। ৩শ’ থেকে ৫শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ হালি প্রতি (৪টি) বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা, ৬শ’ থেকে ৮শ’ গ্রামের হালি ১৬শ’, ৯শ’ থেকে ১ কেজি ওজনের বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়।
মূলত ইলিশের মৌসুম শেষের দিকে চলে আসায় দাম কমে যাচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন। সামনের দিনগুলোতে দাম আরো কমবে বলে জানান তারা। তবে বড় ইলিশের দেখা বেশি মিলছেনা। খুচরা বাজারে ইলিশের দাম না কমায় অনেক ক্রেতাকে পাইকারী বাজার থেকে ইলিশ কিনতে দেখা গেছে। ফলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দর কষাকষিতে মুখর হয়ে উঠেছে ইলিশের বাজারগুলো।
ভোলা সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আশ্বিনের পূর্ণিমার তিথির ওপর ভিত্তি করে গত বছরের চেয়ে ১২ দিন আগে এ বছর ইলিশের প্রজনন মৌসুম নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই ১ অক্টেবর থেকে ২২ অক্টোবর প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ যাতে অবাধে ডিম ছাড়তে পারে সে জন্য সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
তিনি আরো বলেন, সঠিক সময়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় এ বছর অর্ধেকেরও বেশি মা-ইলিশ ডিম ছাড়তে পেরেছে। ফলে আগামী মৌসুমে কাংখিত পরিমাণে ইলিশ পাওয়া যাবে বলে তিনি দাবি করেন।